দামেস্কের উপকণ্ঠে বিদ্রোহীরা, আসাদ পালানোর খবর অস্বীকার

হামা'র সামরিক বিমানঘাঁটিতে বিদ্রোহী যোদ্ধারা।

সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দ্রুতগতিতে দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং এরই মধ্যে বেশ কিছু উপশহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন যে রাজধানী "ক্রমশ বিদ্রোহীদের হাতে পড়ছে"। বিদ্রোহীরা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হোমস শহরে প্রবেশ করেছে বলেও জানা গেছে। এ শহরটি দামেস্ককে উত্তর ও উপকূলের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আলাওয়ী সম্প্রদায়ের মূল কেন্দ্র।

এদিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ রাজধানী থেকে পালিয়ে গেছেন বলে প্রচারিত খবর অস্বীকার করেছে দেশটির সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ আল-রহমুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন যে দামেস্কের চারপাশে একটি "অত্যন্ত শক্তিশালী সামরিক বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে এবং এই প্রতিরক্ষা রেখা কেউ ভেদ করতে পারবে না"।

অন্যদিকে, বিরোধীপক্ষকে সমর্থনকারী সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স (এসইটিএফ) দাবি করেছে যে দামেস্কের "শীঘ্রই পতন হবে" এবং শহরটি কার্যত বেষ্টিত। তারা আরও দাবি করেছে যে ইরানি বাহিনী এবং রাশিয়ান নৌযান সিরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এই সম্ভাব্য প্রত্যাহার দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসতে পারে।

তবে এসটিএফের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

রাশিয়া এবং ইরান বাশার আল আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল।

মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কারণে জাতিসংঘ সিরিয়া থেকে 'অপরিহার্য নয়' এমন কর্মীদের প্রত্যাহার করছে।

এরই মধ্যে দেশটিতে ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকে সীমান্ত এলাকায় আটকা পড়েছে অথবা উত্তর-পূর্বে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।

জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গায়ের পেডারসেন আরও রক্তপাত এড়াতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা হুগো ব্যাচেগা মন্তব্য করেছেন যে বিদ্রোহীরা এখন দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস দখলের জন্য লড়াই করছে। তিনি বলেন, "হোমস পতিত হলে, আসাদ গভীর সঙ্কটে পড়বেন কারণ তার ক্ষমতার মূল কেন্দ্র, দামেস্ক বেষ্টিত হয়ে পড়বে।"

হুগো ব্যাচেগা বিদ্রোহীদের "প্রতীকী বিজয়" হিসেবে দেরা দখলের কথা উল্লেখ করেন, এখান থেকেই ২০১১ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।

তিনি বলেন, সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী পূর্ব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে, যার মধ্যে দের আল-জোর শহরও রয়েছে, যার ফলে সরকারের অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে।

বছরের পর বছর যুদ্ধের কারণে একসময়কার শক্তিশালী সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে এখন অনেকটা "অসমর্থ এবং অনাগ্রহী" মনে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে সেনাদের পক্ষত্যাগ এবং নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসা বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির একটি কারণ।

বিদ্রোহীরা দামেস্কের উপকণ্ঠে জেরমানা শহরে বাশার আল আসাদের বাবা, হাফেজ আল আসাদের একটি মূর্তি নামিয়ে ফেলেছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। স্থানটি দামেস্কের কেন্দ্রস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত।

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।


Post a Comment

0 Comments